সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন
গোদাগাড়ী প্রতিনিধি : গোদাগাড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ ছাড়া দলিল সই করেন না সাব-রেজিস্টার। এ অফিসে একেকটি দলিলে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষের লেনদেন হয়। দলিলের সার্টিফাইড কপি, পাওয়ার অব অ্যাটর্নী থেকে বিক্রয় কবলা দলিল রেজিষ্ট্রি,অফিস খরচ সহ নানান কথা বলে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সিটিজেন চার্টার ঝুলিয়ে রাখলেও তাতে নেই স্বচ্ছতা। সচারচার সাফ কবলা দলিলের খরচের তালিকাতেও রয়েছে অস্বচ্ছতা।
লাইসেন্স বাতিল হওয়ার শঙ্কায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহুরী বলেন, রেজিস্ট্রার স্যার
বিক্রয় কবলা দলিল প্রতি ১৪০০ টাকা,
পাওয়ার অব অ্যাটর্নীর বলে বিক্রয় কবলা দলিল প্রতি ৩০০০ টাকা,
সার্টিফাইড কপি প্রতি ৮০০ টাকা ও
দলিল প্রতি অফিস খরচ ৪০০ টাকা নিয়ে থাকেন।
প্রতি মাসে প্রায় ৬৫০ টি দলিলে সই হয়। এতে মাসে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে যান সাব রেজিষ্ট্রার।
গোদাগাড়ী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গত ২৩-২৪ অর্থ বছরে মোট দলিল হয়েছে ১১১৪৫টি এখান থেকে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৩ কোটি ৮১ লক্ষ ১৪ হাজার ৫৯৪ টাকা। বছরে হিসেব মতে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হলেও রেজিস্ট্রারের পকেটে যায় আড়াই কোটি টাকা।
এর বাইরে জমি রেজি: করতে আসা অসহায় গরিব মানুষের পকেট কেটে ঘুষ বাণিজ্য করেছেন সাব রেজিষ্ট্রার প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এতেও তাদের হয় না। দরবেশ বেশে বসে থাকা সাব রেজিস্ট্রার দিন শেষে বাড়ী চলে যাওয়ার পরে তার একান্ত সহকারি হিসেবে পরিচিত নকল নবিস মুন্না ব্যাগে করে টাকাগুলো তাঁর বাড়ীতে পৌছে দেন।
মহুরীর তথ্য মতে প্রতি সপ্তাহের ৩ দিনে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন সাব রেজিস্ট্রার। সমস্ত ঘুষের টাকা নকল নবিস মুন্নার মাধ্যমে গ্রহণ করেন তিনি। এছাড়াও জমির ত্রুটিপুর্ণ কাগজের দলিল ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে সই করে থাকেন। হিসেব অনুযায়ী প্রতি মাসে ১২-১৫ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয় গোদাগাড়ী সাবরেজিস্ট্রি অফিসে।
ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এক মহুরি বলছেন, এ বিষয়ে নিউজ করে কোন লাভ হবে না কারণ, স্যার সরাসরি ঘুষ নেন না।এখানে সকল মহুরী এ কাজে জড়িত। আপনি কাকে ধরবেন। মহুরী ফিসের নামেও এটা আদায় করা সম্ভব। আপনি ফিস দিবেন না আপনার দলিল কোন মহুরী লিখবে না।আপনি কোথায় দলিল রেজিষ্ট্রি করবেন বলেন।
একজন সাংবাদিক বলছেন আমি গত ২০ জুলাই জমি রেজি: করেছি আমার কাছ থেকেও টাকা নেয়া হয়েছে এ বিষয়ে কি বলবেন? তিনি উত্তর দিতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাব-রেজিস্ট্রার সাদেকুর রহমানের আদেশে পেশকার লাইলুন নাহার, নকল নবিশ মুন্না শক্তিশালী সিণ্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। অতিরিক্ত টাকা না দিলে তারা কোনো কাজই করেন না বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন সাব- রেজিস্ট্রার ঘুষ নিতে বাধ্য করেন তাদের।
উল্লেখ্য,সাব -রেজিস্টার সাদেকুর রহমান পবা উপজেলায় থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় ঘুষ বানিজ্যের খবর তুলে ধরা হয়।সেই সময় সাদেকুর রহমান ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগে বদলি হোন।
পেশকার লাইলুন নাহার বলেন, স্যার সরকার পতনের আগে টাকা নিয়েছেন। এখন তিনি কোন টাকা নেন না। তিনি দলিল লেখকদের দোষারোপ করে বলেন, মহুরীরা কাস্টমারের কাছে টাকা নেন।আমরা এখন নিই না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী অফিসের সাবরেজিস্টার সাদেকুর রহমান বলেন. আমার এখানে সমিতির নাম করে কেউ টাকা নিতে পারবে না। সমিতি বন্ধ করা হয়েছে। তার নিজের ঘুষ বাণিজ্য সম্পর্কে বলেন আমার নামে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে বলেন আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আপনার নামে যে টাকা নেয়া হয় সেটা সকল মুহুরিই বলছেন সে ক্ষেত্রে আপনি কয় জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এমন প্রশ্ন করলে কোন উত্তর দিতে পারেননি।
Copyright @ 2024 Jonotarsomoy24.com । জনতার সময়২৪. All rights reserved
Leave a Reply