নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোরঃ
রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের (ইউপি) সীমান্তবর্তী গোয়ালপাড়া গভীর নলকুপের স্কীমের তিন ফসলি জমি নস্ট করে গড়ে উঠেছে কেআরবি অবৈধ ইঁট ভাটা। ফসলি
জমির উপরিভাগের উর্বরা মাটি (টপ সয়েল) যাচ্ছে এই ইট ভাটায়। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা।পতিত জলাভূমির পরিবর্তে ভাটা মালিকরা তিন ফসলি কৃষি জমির টপ সয়েল' (উপরের মাটি) কেটেই ইট তৈরি করেন। এতে প্রতিবছরই কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। উপজেলায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞরা। এদিকে ইট ভাটা মালিকের দাবি বিজয়,স্বাধীনতা দিবস ও পহেলা বৈশাখে তাদের বড় অঙ্কের চাঁদা দিতে হয় উপজেলা প্রশাসনের কাছে। উপজেলা প্রশাসনের সম্মতি না থাকলে কি এভাবে ভাটা চালানো যায়। এই ইট ভাটা কৃষি জমির টপ সয়েলের ওপর সম্পুর্ন নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কৃষি জমির টপসয়েল একবার সরে গেলে তা পুনরায় কৃষি উপযোগী করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।আবাদি জমির টপসয়েল হারানোর ক্ষতিকর প্রভাবটা এখনো দৃশ্যমান হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতের জন্য তা অশনি সংকেত।
স্থানীয়রা জানান,এলাকার কৃষকদের বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে উপজেলার বাধাইড় ইউপির ঝিনাখৈর গোয়ালপাড়া তিন ফসলি কৃষি জমিতে বিশাল আয়তনের ‘কেআরবি’ নামের অবৈধ ইট ভাটা গড়ে তুলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রফিকুল ইসলাম ও একই জেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের হাজী আবুল কালাম আজাদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি চলছে। ফসলি জমি থেকে এক্সক্যাভেটর (ভেকুঁ) দিয়ে মাটি কেটে তা পরিবহন করা হচ্ছে ট্রাক্টরের মাধ্যমে। এসব মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে বতসভিটা। একই সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে ইট ভাটায়।সংঘবদ্ধ একটি চক্র কৃষিজমি থেকে মাটি বিক্রির জন্য সাধারণ কৃষকদের আর্থিকসহ নানা প্রলোভন দেখায়। প্রতি ট্রাক্টর মাটি তারা ৩০০ টাকায় কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নেয়। আর ইট ভাটায় বিক্রি করে এক হাজার থেকে ১২শ টাকায়। এভাবে বাড়তি অর্থ আদায় করে নিচ্ছে চক্রের সদস্যরা।
এদিকে কয়লার পরিবর্তে দেদার পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইট ভাটার সামনে নামমাত্র কয়লা রাখলেও চুল্লিতে প্রধান জ্বালানি হিসাবে বাবহার করা হচ্ছে কাঠ।এতে একদিকে ইট ভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, অপরদিকে উপজেলায় বনভূমির পরিমাণ কমছে। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো তদারকি নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, কালো ধোঁয়া নির্গত হয়; এমন ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না এবং কোনো ইট ভাটায় কাঠ পোড়াতে পারবে না।
এছাড়া প্রতিটি ইটভাটা জিকজাক কাঠামোতে স্থাপন করে পরিবেশ দূষণমুক্ত রামতে হবে। এছাড়াও ইট তৈরীতে ফসলি জমির মাটি ব্যবহার করা যাবে না। এবিষয়ে জানতে চাইলে ভাটা মালিক হাজি আবুল কালাম আজাদ অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সারাদেশে যেভাবে ইট ভাটা চলছে তারাও সেভাবে ইট ভাটা চালাচ্ছেন সমস্যা কি ?
রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, অকৃষি অনাবাদি পতিত জলাভূমির মাটি সংগ্রহ করে ইট তৈরি করার অঙ্গীকার করেই ভাটা মালিকরা আমাদের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে যান। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তারা অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না করে কৃষি জমির (টপ সয়েল) উর্বরা মাটি নিয়ে ইট তৈরি করছে। এতে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা শিগগিরই মাটির উৎস নিয়ে ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
সম্পাদক ও প্রকাশক: সোহানুল হক পারভেজ