সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২০ অপরাহ্ন
মমিনুল ইসলাম মুন বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাগমারায় গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র জনতার ওপর হামলা ও আক্রমনের ঘটনায় রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ওরফে ভেকু কালামকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার (২ অক্টোবর) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও মন্ত্রী-এমপিরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। শেখ হাসিনাসহ অনেকে বিদেশেও চলে গেছেন। ৫ আগস্টের ওই ঘটনায় বাগমারায় এখন পর্যন্ত ৬টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ৪টি মামলার প্রধান আসামী হলো সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ। তিনি সরাসরি নেতৃত্ব দিয়ে বাগমারায় মিশন পরিচালনা করেন। পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় বাগমারায় থানায় বিস্ফোরক ও নাশকতার মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগীরা।
আবুল কালাম আজাদ ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি তাহেরপুর পৌরসভার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বীতা মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার বাড়ি পৌর এলাকার জামগ্রাম এলাকায়। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ওই সময় নির্বাচনী হলফনামায় তিনি জানিয়েছিলেন, স্থানীয় সম্পদ বলতে শুধু একটি মাটির বাড়ি ছিল বলে উল্লেখ করেন।
পৌরসভার নির্বাচনের সময় হলফনামায় স্থায়ী সম্পদ বলতে শুধু একটি মাটির বাড়ি দেখানো সেই মেয়র প্রার্থী, নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাতারাতি বুনে গেছেন কোটিপতি। তাহেরপুর পৌরসভায় মেয়র হয়ে শুরু করেন ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতি। প্রতিটি প্রকল্পে চলে লোটপাট। এ যেন মগের মুল্লুক। বলার কেউ নেই। মেয়র আবুল কালামের সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি তাহেরপুরের জনসাধারণ।
মেয়র হতে না হতে তিনি দোতলা আলিশান বাড়ি বানিয়েছেন। বাড়ির পাশে খনন করেছেন প্রায় ৯০ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর। এই জমির মালিক আশপাশের বিভিন্ন ব্যক্তি, যাঁদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নামেমাত্র লিজ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেলেও তার দাপটের কাছে টিকতে পারে লোকজন। খয়রার বিলেও ছিল তাঁর আধিপত্য।
এর সবই করেছিলেন পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডারবাজি করে এবং হাটের লিজ প্রদানের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।
মেয়র হওয়ার আগে কালামের এক বিঘা জমিও ছিল না। অথচ প্রথম মেয়র হওয়ার পর তিনি কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন।
যার সব কিছুই তিনি করেছেন পৌরসভার সম্পদ লুটপাট করে অথবা সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পদ দখল করে। কিন্তু তাঁর ভয়ে এখনো কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। কারণ তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা সর্বদায় পিস্তল আর অস্ত্র নিয়ে ঘুরে। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করলেও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তার কিছুই করেননি।
সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে আতংক ছড়িয়ে পর পর তিন মেয়াদে তাহেরপুর পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয় তিনি। সেই সাথে দীর্ঘ সময় মেয়র হিসেবে দায়িত্বে থাকায় কয়েক কোটি টাকার তাহেরপুর হাট নিজের লোকজনের মধ্যে নাম মাত্র ইজারা মূল্যে পছন্দের ব্যক্তিকে লিজ দিয়েছেন সব সময়।
কালামের এসব অপতৎপরতা সম্পর্কে তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি জানান, কালাম সাবেক এমপি এনামুল হক কেউ নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদান করেছেন যার বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে তাহেরপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল থেকে শুরু করে পৌরসভার নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে ডুবে থাকেন তিনি। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে গড়ে তোলেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সেই সঙ্গে তাহেরপুর জুড়ে চালাতে থাকেন ত্রাসের রাজত্ব।
সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মেয়র থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কালাম। ওই নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েই নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি তাহেরপুর পৌরসভায় স্ত্রী সায়লা পারভীনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচনে জয়ী করেন। কালামের ভয়ে অন্য কেউ আর মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সংসদ নির্বাচনে একের পর এক ত্রাস সৃষ্টির কারণে কয়েক দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কালামকে। নির্বাচনের সময় তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও করে নির্বাচন কমিশন। অবশেষে এর পর নির্বাচনে জয়ী হয়ে মাত্র সাত মাসেই বাগমারায় অন্তত তিন হাজার বিঘা জমিতে পুকুর খনন হয় তাঁর দাপটে।
Copyright @ 2024 Jonotarsomoy24.com । জনতার সময়২৪. All rights reserved
Leave a Reply