সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন
তানোরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
সোহানুল হক পারভেজ তানোর (রাজশাহী)
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর তানোর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগ নেতা মাইনুল ইসলাম সেলিমের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা তার দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদুকে) একটি লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছেন। এঘটনায় প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, স্কুল সরকারী করণের নামে সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে ইফতার করানোর জন্য স্কুল ফান্ডের ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। বিগত ২০১৯ সালের ১৩মে থেকে স্কুলের দোকানঘর ভাড়ার প্রায় ১১ লাখ টাকা স্কুল ফান্ডে জমা দেননি। এছাড়াও প্রশংসাপত্রের জন্য ছাত্র প্রতি পাঁচশ’ টাকা করে গ্রহন করেন যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ লাখ এসব টাকার কোনো হদিস নাই।
অন্যদিকে বিগত ২০১৯ সাল থেকে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, ফরমপূরণে ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন যার পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রধান শিক্ষক এসব টাকা নয়ছয় করেছেন। এদিকে ২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে দুইটি করে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে ৩০০ টাকা করে সেশন চার্জ এবং ২০০ টাকা বেতন নিয়েছেন যার পরিমাণ ৩ লাখ টাকা। যা স্কুল ফান্ডে জমা দেয়া হয়নি।
এছাড়াও সরকারি অনুদানের প্রায় ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এদিকে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে প্রতি পরীক্ষা যেমন জেএসসি এবং এসএসসি হইতে বিদ্যালয়ের আয়ের সমুদয় অর্থ প্রায় ৬ লাখ টাকা তারা আত্মসাৎ করেছেন।অন্যদিকে বিদ্যালয়ের ভেন্যু ব্যবহারকারীদের কাছে প্রাপ্ত অর্থ যার পরিমাণ দেড় লাখ টাকা। প্রধান শিক্ষক আত্মসাত করেছেন।ওদিকে উপজেলা ও জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দকৃত প্রায় ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়াও এফডিআর ফান্ডের কোনো হদিস নাই। অন্যদিকে স্কুলের দোকান ঘরের জামানত বাবদ ১৫ লাখ টাকার কোনো হদিস নাই সে আত্মসাৎ করেছেন। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম সেলিম সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর ছোট ভাই পরিচয় দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর নানাভাবে অত্যচার নির্যাতন করেছেন। আবার পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশংসাপত্র-সার্টিফিকেট ও মার্কসীট প্রদানে ৩০০ টাকা করে আদায় করা হয়। যার পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অন্যদিকে সেলিম নিজে প্রধান শিক্ষক হবেন বলে সাবেক এমপির কাছে তিনি প্রতিশ্রুতি প্রদান পূর্বক সরকারী করনের জন্য কোনরূপ ব্যবস্থা না গ্রহন করা হয় এই মর্মে অঙ্গীকার করে তিনি বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমি কোন অর্থ আত্মসাৎ করেনি। প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। আমিও চাই অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হোক। আমি আত্মসাৎ করে থাকলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে কর্তৃপক্ষ বলেও দাম্ভিকতা দেখান তিনি । মডেল পাইলট স্কুলকে সরকারি করন না করার জন্য আপনি টাকা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি কোন টাকা নিই নি। বরং আমি প্রতিবাদ করার কারনে সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরী হকিস্টিক দিয়ে পেটাতে চেয়েছিলেন। তার সামনে কথা বলার সাহস ছিলনা।
সুত্র জানায়, কোন স্কুল সরকারি করণ করতে হলে শিক্ষা অফিস থেকে ১ কিলোমিটার বা সদর হতে হবে। কিন্তু সেলিম প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন রাজনৈতিক বিবেচনায়। সে সাবেক এমপি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট আত্মীয়ের পরিচয়ে নিয়োগ পান। কিন্তু তার বিএড সার্টিফিকেটের সমস্যার কারনে মডেল পাইলট স্কুল সরকারি না হয়ে শিক্ষা অফিস থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে মুন্ডুমালা স্কুলকে সরকারি করন করা হয়।
কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করে শুধু মাত্র টাকার বিনিময়ে সরকারি করণ করা হয়। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকার ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়। তারপর থেকে গা ঢাকা দেন প্রধান শিক্ষক সেলিম। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
Copyright @ 2024 Jonotarsomoy24.com । জনতার সময়২৪. All rights reserved
Leave a Reply