

নিজস্ব প্রতিবেদক:চলতি মাসের শুরুর দিকে বৃষ্টির পানি পেয়ে হেরো ট্যাক্টর দিয়ে জমি চাষ শুরু করেন কৃষি ভ্যান্ডার হিসেবে খ্যাত রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষকরা। দিনরাত সমান তালে চলে জমি চাষের কাজ। মাঝে কয়েকদিন পানি না পেয়ে চাষকৃত জমি শুকিয়ে যায়। মহা চিন্তায় পড়েন কৃষকরা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার শেষ বিকেল থেকে পরদিন শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পর্যন্ত ভারী মাঝারি বৃষ্টি হয়। যদিও শুক্রবার দুপুরের পরে রোদ দেখা যায়।তানোর পৌর সদর এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান জানান, প্রায় সপ্তাহ আগে বৃষ্টির পানি পেয়ে জমি চাষ করেছিলাম। কিন্তু মাঝে কয়েক দিন প্রচন্ড খরতাপে চাষকৃত জমি শুকিয়ে যায়। গভীর নলকূপ থেকে সেচ পানি নিয়ে রোপন করারও উপায় নাই। আবার চারার বয়স হয়ে যাচ্ছিল, মহা চিন্তায় ছিলাম। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার শেষ বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পানি পেয়ে জমি রোপন করেছি। তিন বিঘা জমি রোপন করেছি। উপজেলা জুড়েই চলছে জমি রোপন। এজন্য শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে, বেড়েছে কদর। তিন বিঘা জমি রোপন করতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কামারগাঁ ইউপির কৃষক আব্দুল জানান, জমি চাষ করে রেখেছিলাম। শুক্রবারে রোপন করা হত। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার শেষ বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির পানিতে জমি পুকুরে রুপ নিয়েছে। কোনভাবেই রোপন করা যাবেনা। শুধু আমার না এরকম অনেকের জমিতে প্রচুর পরিমানে পানি রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার নিচুঁ এলাকা বলতে তানোর পৌরসভার কালিগঞ্জ, হাবিবনগর, কাশেম বাজার, বুরুজ, জিওল, আমশো, চাপড়া, গোকুল ও তালন্দ নিচ পাড়া। কামারগাঁ ইউপির কামারগাঁ, শ্রীখন্ডা, দমদমা, বাতাস পুর, পরিশো দূর্গাপুর, মাদারিপুর, জমসেদ পুর, ধানোরা, ছাঐড়।কলমা ইউপির চন্দনকোঠা, কুজি শহর সহ নিচুঁ এলাকার জমিগুলোতে থৈথৈ করছে পানি।অবশ্য মুন্ডুমালা পৌরসভা, পাঁচন্দর তালন্দ, বাধাইড়, কলমা, সরনজাইসহ উচুঁ এলাকার জমিগুলোতে পানি ছিল না। গত বৃহস্পতিবার শেষ বিকেল থেকে রাতভর বৃষ্টির পানিতে জমি রোপন শুরু হয়েছে। দিন রাত সমানতালে চলছে জমি চাষ ও রোপনের কাজ। একসঙ্গে জমি রোপনের কারনে শ্রমিক সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিঘায় প্রকার ভেদে ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত রোপনের খরচ।শ্রমিক মোস্তফা জানান, আমরা এক সাথে ৮/১০ জন শ্রমিক জমি রোপন করছি। এক বিঘা জমি রোপনের জন্য ১৬০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত ৪/৫ বিঘা জমি রোপন করা হচ্ছে। আবার কোন দিন ৬ বিঘাও রোপন করা যায়। সে আরো জানায়, চাপড়া, আড়াদিঘি মাঠে গত বৃহস্পতিবার আগে গভীর নলকূপ থেকে সেচ পানি নিয়ে রোপন করেছে। বৃহস্পতিবারে বৃষ্টি না হলে জমি রোপন করা যেত না।কৃষকরা জানান, সময়মত বৃষ্টির পানি না পেলে জমি রোপন করা যেত না। কারন সেচ পানিতে রোপা আমন ধান রোপন করা অসম্ভব। আবার গভীর নলকূপ অপারেটরদের রয়েছে দৌরাত্ম্য। রহমতের বৃষ্টির পানিতে জমি চাষ করা গেলেও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারনে অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে সার কীটনাশক। এক বিঘা জমি রোপন করতেই নিম্নে ৫ হাজার টাকা থেকে ঊর্ধ্বে ৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। শ্রমিক সংকট ব্যাপক। রোপ আমন ধান রোপনে কৃষকদের মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কারন ধান কাটা মাড়ায়ের পর আলু রোপন হবে। এজন্য কে কার আগে রোপন করতে পারে। আগে রোপন করতে পারলে আগে কাটা পড়বে। আর হয়তো ১০/১২ দিনের মধ্যে জমি রোপন শেষের দিকে চলে আসবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, সময়মতই বৃষ্টির পানি হয়েছে। যার কারনে কৃষকরা কোমর বেধে জমি রোপন শুরু করেছেন। এবারে রোপা আমনের লক্ষমাত্রা ২২ হাজার ৫০০ হেক্টর ধরা হয়েছে। এপর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমি রোপন হয়েছে। কৃষিতে আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে বলেই অল্প সময়ের মধ্যে জমি চাষ ও রোপন শেষ করতে পারছেন কৃষকেরা।