সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ অপরাহ্ন
সারোয়ার হোসেন স্টাফ রিপোর্টার: বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের দোসর সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর হাতে গড়া রাজশাহীর তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির প্রায় অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে গা ঢাকা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা বলে অভিযোগ উঠেছে। সমিতির সভাপতি আ”লীগ নেতা চাপড় স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান, সম্পাদক পৌর আ.লীগ সভাপতি আকচা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসলাম উদ্দিন ও তাদের সহযোগী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম সেলিম ও কৃষক লীগ সভাপতি পরিশো দূর্গাপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাম কমল সাহা সমিতির টাকা লোপাট করেছেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। ফলে অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। সমিতির বিষয়ে সরেজমিনে তদন্তের দাবি তুলেছেন সাধারণ শিক্ষকরা।
জানা গেছে, বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে উপজেলায় মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারী নিয়ে গঠন করা হয় শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি। বিগত ২০১০/১১ সালের দিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুধু মাধ্যমিক পর্যায়ে না মাদ্রাসা, কলেজ ও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক কর্মচারী দের নিয়েও গঠন করা হয় শিক্ষক কর্মচারী সমিতি। শুধু মাত্র স্বৈরাচারের দোসর সাবেক এমপির ক্ষমতা কে দীর্ঘস্থায়ী ও ভোট কারচুপির মাধ্যমে বিজয়ী হতেই এমন সমিতির জন্ম দেন তিনি।সুত্র জানায়, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে যাবতীয় সব কিছু হয়ে থাকত। কিন্তু সাবেক এমপি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য তিনি শিক্ষক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা আ”লীগের যুগ্ম সম্পাদক জিল্লুর রহমানকে। সে চাপড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় পৌর আ”লীগ সভাপতি আকচা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসলাম উদ্দিন কে এবং কর্ণধর হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি পারিশো দুর্গাপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাম কমল সাহা, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ময়নার ঘনিষ্ঠ সহচর মডেল পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক নানা দূর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত মাইনুল ইসলাম সেলিম, ছিলেন পাচন্দর ইউপি যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম। এসব শিক্ষকরা সমিতি করার পর থেকে প্রতি বছর পিকনিকের নামে চাঁদা বাজি, নিম্নমানের প্রকাশনীর সাথে অধিক টাকায় চুক্তি করে সে সব গাইড স্কুলে সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকার বানিজ্য করেছেন । প্রতি পরিক্ষায় প্রশ্ন পত্র তৈরি করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। কোন শিক্ষক কে প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে সবকিছুই সাবেক এমপির বাসায় বসে ঠিক করতেন এরা। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে কোন শিক্ষক কে দায়িত্ব দিলে কারচুপি করা যাবে সেটাও ঠিক করতেন এসব শিক্ষক নেতারা। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো এক প্রকার দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হত। যে দিন ফারুক চৌধুরী তানোরে আসবে সে দিন তারা প্রতিষ্ঠান রেখে তাকে তেল মারতে ব্যস্ত থাকত।গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তারপর থেকে এসব নাম ধরী শিক্ষক নেতারা আত্মগোপনে আছেন। তাদেরকে খুজেও পাওয়া যাচ্ছে না। স্কুলেও আসছেন না তারা। যার কারনে মুখ থুবড়ে পড়েছে পাঠদান কার্যক্রম ।
শিক্ষকরা জানায়, তারা তো স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন না। তারা ছিলেন সাবেক এমপির অন্যতম দোসর। দেশে চলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নিয়ম অনুসারী। আর এখানে চলত শিক্ষক নেতাদের কথায়। শিক্ষা ক্ষেত্রে দেশে চলেছে এক রকম নৈরাজ্য, আর এখানে চলছে সাবেক এমপির নির্দেশে শিক্ষক নেতাদের নৈরাজ্য। এসব শিক্ষক নেতাসহ কয়েক শিক্ষকদের তো আস্থানা হয়েছিল ফারুক চৌধুরীর বাসভবন। দিনের পর দিন তারা স্কুলে আসত না, তারা সাধারণ শিক্ষকদের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ। প্রায় ১৪ বছরের সমিতির আয় ব্যয়ের কোন হিসেব নাই। প্রকাশনীর সাথে চুক্তির টাকার পরিমান কয়েক কোটি হবে। তাদের কাছে হিসেব চাওয়ার মত কারো সাহস ছিল না। শিক্ষক পেশার বিপরীতে তারা রাজনীতি ও লুটপাটে মেতেছিল। আজ তারা কোথাও, আজ কেন আত্মগোপনে। কেন পালিয়ে থাকতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠানে অন্য মতের শিক্ষক থাকলে এসব শিক্ষক নেতাদের কথায় নেমে আসত নির্যাতনের খড়গ। শিক্ষা অফিস ছিল তাদের কার্যালয়। প্রকাশনী থেকে নিম্নমানের গাইড আনতেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বহুল আলোচিত বই ব্যবসায়ী জুবায়ের ইসলাম। এই জুবায়ের শুধু মাধ্যমিক স্কুলে না ক্ষমতার দাপটে কলেজ, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক স্কুলেও গাইড দিতেন। কেউ গাইড না নিলে শিক্ষক সমিতির নেতাদের মাধ্যমে নানা ভাবে হয়রানি করা হত বলেও অহরহ অভিযোগ।টাকা লোপাটের বিষয়ে সম্পাদক আকচা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসলাম উদ্দিনের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে সভাপতি জিল্লুর রহমান টাকা লোপাটের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, এত টাকা তো নাই লোপাট হবে কিভাবে। তিনজনের স্বাক্ষরে ব্যাংকে টাকা রাখা হত। প্রায় ৬০ জন মত শিক্ষক কে অবসর ভাতা দেয়া হয়েছে। এখনো ২০/২৫ জন মত অবসর ভাতা পাবে। বর্তমানে কত টাকা আছে আর সমিতির কি অবস্থা জানতে চাইলে তিনি জানান ৭০/৮০ হাজার টাকা হবে। সমিতির নতুন আহবায়ক হয়েছেন পৌরসভা (আমশো) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান মুন্টু।
আহবায়ক মতিউর রহমান মুন্টুর সাথে সম্প্রতি ইউএনওর দপ্তরে দেখা হলে সমিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সবে আহবায়কের দায়িত্ব নিয়েছি। সমিতির কি পরিমান টাকা আছে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, এখনো হিসেব হয় নি, হলে জানা যাবে কি পরিমান অনিয়ম দূর্নীতি হয়েছে। হিসেব না নিয়ে কিভাবে দায়িত্ব নিলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সবকিছুই নেওয়া হবে।
প্রধান শিক্ষকরা গত ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন কেন এবিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান জানান, যারা আত্মগোপনে আছেন সবাই ছুটি নিয়েছে। কতদিনের ছুটি কবে যোগ দিবেন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদ উত্তর না দিয়ে সভাপতি ইউএনওর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। অবশ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও বদলি হয়েছেন। যদি ইউএনও বলবেন তাহলে শিক্ষা অফিসারের কাজ কি এমন প্রশ্ন শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলের।
Copyright @ 2024 Jonotarsomoy24.com । জনতার সময়২৪. All rights reserved
Leave a Reply